আরও সংবাদ অনুসন্ধান করুন

হুমকি,ঘুস এবং হস্তক্ষেপ, কোন কিছুই জীবন বাঁচানো থেকে নিবৃত করে না আফ্রিকান তামাক নিয়ন্ত্রণ এডভোকেসি কর্মীকে

বেশিরভাগ তামাক নিয়ন্ত্রণ এডভোকেসি কর্মীদেরই হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে হয়-বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য-নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে যেখানে বিশ্বের অধিকাংশ ধূমপায়ীদের বাস।

Akinbode Oluwafemi, executive director of Corporate Accountability and Public Participation Africa

আকিনবডে “বোডে” ওলুওয়াফেমি নাইজেরিয়া এবং আফ্রিকা জুড়ে বেশ কিছু অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন যা নিজের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাথে সম্পর্কিত বলে তাঁর ধারণা।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানার বাইরে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের এক ভীতিকর উদাহরণ হয়ে থাকবে।

দীর্ঘ সময় ধরে এডভোকেসির সাথে জড়িত ওলুওয়াফেমি একটি তামাক বিরোধী প্রচারাভিযানে “প্রাণবন্ত” তারুণ্যের অংশগ্রহণ দেখে বেশ চমৎকৃত হন।যখন তারা নাইজেরিয়ার ইবাদানে অবস্থিত কারাখানায় যেয়ে প্রতিবাদ জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করে, তিনি এবং তাঁর সহকর্মীগণ যাবতীয় রসদ ও পরিবহনের ব্যবস্থা করেন।তরুণ প্রতিবাদকারীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালনে সাথে আনে মাদুর এবং একজন টেলিভিশন ক্যামেরা কর্মী, যার জন্য তাদের ধন্যবাদ প্রাপ্য।

এর প্রতিক্রিয়া ওলুওয়াফেমি কে হতবিহবল করে দেয়।

“এটা তাদের কারখানার সামনে বসে একটা সাধারণ অহিংস প্রতিবাদ ছিল।তারা এর প্রতিক্রিয়ায় আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার,সাঁজোয়া যান ও ট্রাকভর্তি পুলিশ পাঠায়।” বলেন কর্পোরেট একাউন্টেবিলিটি ও পাবলিক পার্টিশেপেশন ইন আফ্রিকা এর নির্বাহী পরিচালক ওলুওয়াফেমি।

তিনি পরে জানতে পারেন কেউ একটি বোমা হামলার হুমকির খবর রটিয়েছিল। তিনি বলেন, টেলিভিশন কর্মীর উপস্থিতি আইনের কুৎসিত কোন প্রয়োগ প্রতিহত করেছিল।

লাইভস এট স্টেকঃ ট্রু স্টোরিজ অফ পিপল চ্যালেঞ্জিং বিগ টোব্যাকো” শীর্ষক স্টপ এর একটি সিরিজে নিজের লাগোসের বাড়ির ওপর আক্রমণের একটি ঘটনা, ঘুষ প্রদানের অপচেষ্টা এবং অন্যান্য উদ্বেগজনক ব্যাপার নিয়ে ওলুওয়াফেমি অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। এই ভিডিও সমূহে গ্লোবাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারফেয়ারেন্স ইনডেক্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়াবলির ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে, যা নীতিনির্ধারকদের কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে দিকনির্দেশনা দেয়। ভবিষ্যত পর্বগুলোতে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আরও কয়েকজন এডভোকেসি কর্মী বিগ টোব্যাকোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করবেন।

তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বহুরূপ

২০২২ সালের একটি একাডেমিক নিবন্ধ থেকে জানা যায় যে ওলুওয়াফেমি একাই নন ; বেশিরভাগ তামাক নিয়ন্ত্রণ এডভোকেসি কর্মীদেরই হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে হয়-বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য-নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে যেখানে বিশ্বের অধিকাংশ ধূমপায়ীদের বাস।

স্টপ এর সহযোগী বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এডভোকেসি কর্মীদের জরিপ ও সাক্ষাতকারের মাধ্যমে জানতে পারেন যেঃ

  • ৭৪ শতাংশ মনে করেন তারা ভীতি প্রদর্শনের শিকার হয়েছেন, যা প্রায়শই এসেছে অবমাননার মাধ্যমে
  • ৪৩ শতাংশ ভয়াবহ হুমকি পেয়েছেন, যার মধ্যে আছে সহিংসতা, চুরির ঘটনা, সাইবার আক্রমণ এবং নজরদারি।
  • আর আইনি হুমকির ঘটনা বেশ স্বাভাবিক,এমনকি যখন মামলা ভিত্তিহীন এবং প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এসব কূটকৌশল সময় ও সম্পদের অপচয় ঘটায় এবং কার্যকর সম্পর্ক গড়ার পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে,এমনটাই উঠে এসেছে গবেষণায়। এডভোকেসি কর্মীরা তাদের প্রচারণা কমিয়ে আনতে বা জোরালো আওয়াজ তুলতে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন। অন্যরা নিজেদের ও পরিবারের ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজ পরিত্যাগ করেন।

“ব্যাক্তিগত ভাবে আমি শক্তভাবে আওয়াজ তোলার পক্ষে; কিন্তু আমি ভীত”, একজন এডভোকেসি কর্মী জানান গবেষকদের।

আফ্রিকাতে তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হল তামাক কোম্পানিগুলো।

আকিনবডে ওলুওয়াফেমি

তামাক নিয়ন্ত্রণ=সামাজিক ন্যায়বিচার

ওলুওয়াফেমির শৈশবে স্কুলের বাসচালক যখন অবিবেচকের মত ছাত্রদের মুখে ধোঁয়া ছাড়ত, তখন থেকেই তিনি সিগারেট ঘৃণার চোখে দেখে এসেছেন। শিশুদের পরোক্ষ ধোঁয়া সহ্য করতে হওয়া উচিত নয়- যেমন উচিত নয় তাদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়া বিপণন যা তাদের ধূমপান শুরু করতে উৎসাহিত করতে পারে।তাঁর কাছে তামাক নিয়ন্ত্রণ হল সামাজিক ন্যায়বিচার, রোগ প্রতিরোধ এবং ভবিষ্যত তরুণদের তাদেরশোষণ করে এমন কোম্পানি থেকে সুরক্ষা দেয়া।

ওলুওয়াফেমি সব ধরণের কোম্পানি হস্তক্ষেপই প্রত্যক্ষ করেছেন। উন্নয়নের পথরোধ করতে চাওয়া ভিনদেশী গুপ্তচরের অপবাদও দেয়া হয় তাকে। কোম্পানি প্রতিনিধিরা তাঁর মন গলাতে চেষ্টা করেছে জলবায়ু খাত সংশ্লিষ্ট ইভেন্ট টিকিট ও অর্থের প্রস্তাব দিয়ে, যা তাঁর অধিকার কর্মের আরেকটি ক্ষেত্র।

ওলুওয়াফেমি বলেন, “আফ্রিকাতে তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক হল তামাক কোম্পানিগুলো। অন্যান্য বেশ কিছু দেশের তুলনায় আফ্রিকায় আমাদের অঞ্চলে তামাক কোম্পানিগুলো এমন কী কোন কোন দেশের চাইতে বেশি ক্ষমতাধর।”

নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানানর কাজটি “অসাধু”; বলেন ওলুওয়াফেমি। তিনি সরকারগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল বাস্তবায়ন ও সুরক্ষার অনুরোধ করেন, যাতে তামাক ব্যবহার হ্রাস এবং কোম্পানি হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার প্রমাণিত উপায় বর্ণিত আছে।

তিনি ক্ষমতাসীনদেরকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যসমূহের পাশাপাশি আসক্তি সৃষ্টিকারী ইলেকট্রনিক সিগারেট ও উত্তাপিত তামাকজাত পণ্য প্রচারের জন্য যে প্রতারণাপূর্ণ সমাধান ফেরী করে বেড়ান তা প্রত্যাখানের আহ্বান জানান।

বিগ টোব্যাকোর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা

বাথ পেপার থেকে জানা যায়, কৌশল বদলে যাচ্ছে। সরকার এবং এডভোকেসি কর্মীদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির দরকার আছে। নতুন পণ্যসমূহের পাশাপাশি, তাদের প্রচারণার জন্য ইনফ্লুয়েন্সার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গেমিং প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নবীন সব মাধ্যম বিদ্যমান।অধিকারকর্মীদের উপর আঘাতও ক্রমাগত অনলাইনের পথ ধরছে। ওলুওয়াফেমি এর সব কিছুরই প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী।

যেহেতু বেড়েই চলেছে হস্তক্ষেপ এবং ভয়ভীতি, এডভোকেসি কর্মীরা জানেন সম্মিলিত স্বরে আওয়াজ তোলা এবং তথ্য বিনিময়, ঝুঁকি হ্রাসকরণ, একে অপরকে সুরক্ষা প্রদান এবং পরস্পরকে সাড়া দেয়া শেখানোর প্রক্রিয়ায় শক্তি নিহিত রয়েছে।

“প্রত্যেকের জন্য এ ব্যাপারে অবগত থাকা উপকারের হবে যে তারা সকলে একই ধরণের সম্মুখীন এমন এক সমাজের অংশ” একজন এডভোকেসি কর্মী বলেন গবেষকদের; “এটা তাদের উদ্দীপিত করবে কেননা যখন আপনি ভয়ভীতির সম্মুখীন হবেন, তখনা নিজেকে আর একা মনে হবে না।”

ওলুওয়াফেমির তামাক কোম্পানির জন্যও একটি বার্তা রয়েছে-যা তিনি এক নৈশভোজে তাঁর বন্ধুর নিমন্ত্রণে আসা তামাক কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় এক পরিচালকের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

“আমরা আপনাদের সাথে কী করেছি? আমাদের পক্ষ থেকে কী চান যা পেলে আমাদের ওপর আপনাদের আক্রমণ থামবে?” ওলুওয়াফেমির কাছে জানতে চান সেই পরিচালক। এই কথা মনে করে মৃদু হাসেন তিনি।

“আপনি জানেন আপনারা ঠিক কি করেছেন?” জবাবে বলেন ওলুওয়াফেমি “আইন মেনে চলুন। আমার সহ-নাগরিকদের কাছে প্রাণঘাতী পণ্যের প্রচারণা থামান।”

“যেই মুহূর্তে এটা করা হবে,তখন থেকে আমার আর চাকরি থাকবে না…আমি তাহলে আমার গ্রাম আর আমার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারব।”