গ্লোবাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারফেরেন্স ইনডেক্স
বড় তামাক কোম্পানিগুলো যে কোন মূল্যে এমনকি জীবন রক্ষাকারী নীতি রুখে দিয়ে হলেও তাদের মুনাফা সুরক্ষিত রাখে। সূচকে কোন দেশগুলো জনস্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করছে তা উঠে এসেছে।
তামাকশিল্প জীবন-রক্ষাকারী নীতিতে বাঁধা দিতে সচেষ্ট। কোন দেশই এর বাইরে নয়।
এই হস্তক্ষেপ বন্ধ করার ক্ষমতা সরকারের রয়েছে।
সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে মানুষের মৃত্যু ঘটতেই থাকবে।
১৯,১৭৮ জীবন প্রতিদিন
৫৮৩,৩৩৩ জীবন প্রতি মাস
৭,০০০,০০০ জীবন প্রতি বছরডব্লিউএইচও এর হিসাব অনুসারে প্রতি বছর তামাকের কারণে ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।
কোন দেশগুলো রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কিভাবে, তার সম্পূর্ণ ধারণা নিন
গ্লোবাল টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারফেরেন্স ইনডেক্স দেখায় কোন কোন দেশের সরকার বিগ টোব্যাকোর হস্তক্ষেপ থেকে জনস্বাস্থ্য নীতিগুলিকে রক্ষা করার পথে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং কোন দেশের সরকার আরও ভাল করতে পারে৷
অংশিদারিত্বে 
অঞ্চলভেদে প্রবণতা
তামাকশিল্পের সাথে সরকারের পারস্পরিক যোগাযোগ
কোনও কোনও সরকারের দূতাবাস বিদেশে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক স্বার্থে কাজ করেছে।
কয়েকটি জাপানি দূতাবাস জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল (জেটিআই) আয়োজিত সিএসআর অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে, MOU/সমঝোতা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে এবং তামাক কোম্পানির জন্য দেশের মধ্যে বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধান করেছে। কোরিয়ান দূতাবাস অন্তত তিনটি দেশে KT&G/কেটিএন্ডজি এর ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সমর্থন দিয়েছে। টোকিওতে বাংলাদেশের দূতাবাস টোকিওতে জেটিআই এর প্রতিনিধিদলকে আতিথেয়তা দিয়েছে এবং বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমকে সমর্থন করেছে।
তামাক শিল্পের জন্য সুবিধা
অনেক সরকার আর্টিকেল ৫.৩ এর আলোকেআচরণবিধি বাস্তবায়ন বা সম্প্রসারণে ব্যর্থ হয়েছে
ভারত,ইন্দোনেশিয়া এবং মায়ানমারের স্বাস্থ্য বিভাগ তামাক কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নির্শেদিকা বা আচরণবিধি করেছে, কিন্তু সেটা সমগ্র সরকারে তা সম্প্রসারিত করেনি, কয়েকটি বিভাগ কোম্পানি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ফিলিপাইনে, আর্টিকেল ৫.৩ নীতিতে আপোষ করেছে সরকার স্বাস্থ্য বিভাগের বাইরের বিভাগগুলো কোম্পানির কাছ থেকে অনুদান নিয়েছে ও কোম্পানির কাজকে অনুমোদন দিয়েছে।
আঞ্চলিক প্রতিবেদন (ইংরেজিতে)তামাক শিল্পের জন্য সুবিধা
কোনও কোনও সরকার মৌলিক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করতে দেরিকরেছে।
জাম্বিয়াতে তামাক কোম্পানিকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য ২০২২ সালে একটি তামাক আইন পাশ হয়, যদিও ২০১৮ সাল থেকে খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ বিল অপেক্ষমান রয়েছে। মোজাম্বিক ও তাঞ্জানিয়াতে, খসড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ বিল সংসদে উত্থাপিত হয়নি।
নীতি উন্নয়ন
কোনও কোনও সরকার তামাক কোম্পানিকে মোড়কের জীবন রক্ষাকারী বিধিবিধান বিলম্ব করতে দিয়েছে।
ক্যামেরুনে সিগারেট মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ (PHW) ২০১৯ সালে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল, কিন্তু কোম্পানিগুলোর অনুরোধেরপরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ায়। সেটি এখন পর্যন্ত পুরোপুরি প্রয়োগ করা যায়নি। গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো এবং নাইজেরিয়ার সরকারও কোম্পানির দেয়া চাপের কাছে নতি স্বীকার করে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ বাস্তবায়ন বিলম্বিত করেছে।
তামাক শিল্পের জন্য সুবিধা
কোনও কোনও সরকার তামাক চাষীদের তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজীকরণে ভর্তুকি দেয়।
বুলগেরিয়াতে সরকার তামাক চাষীদের জাতীয়ভাবে ভর্তুকি প্রদান করে, যা উৎপাদিত তামাকের দামের তিনগুণ বেশি ছিল। রোমানিয়ায় সরকার তামাক চাষীদের এমন হারে সরাসরি ভর্তুকি দিয়েছিল, যা তামাককে হেক্ট্রর প্রতি সর্বোচ্চ ভর্তুকি প্রাপ্ত শস্যে পরিণত করে। সুইজারল্যান্ডে সরকার প্রায় ১১৫ জন কৃষককে রোপনকৃত তামাকের জন্য ভর্তুকি প্রদান করে।
“সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কর্মসূচি” (সিএসআর কর্মসূচি)
বেশ কয়েকটি সরকার তামাক কোম্পানির সাথে বর্জ্য পরিষ্কারে অংশীদার হয়ে কোম্পানিগুলোকে পরিবেশবান্ধব ভাবমূর্তি তৈরিতে সাহায্য করেছে।
যুক্তরাজ্যের হাউজ অফ লর্ডসের দুইজন সদস্য কোম্পানির অর্থায়নে পরিচালিত সিগারেট বর্জ্য পরিষ্কারকারী কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বেলজিয়ামে ফ্ল্যান্ডার্স শহর PMI ও সিগারেট প্রস্তুতকারক সমিতির সঙ্গে বর্জ্য বিরোধী প্রচারণার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ডেনমার্কের চারটি পৌরসভা সিগারেটের বাট/শেষাংশ সংগ্রাহক তৈরি করতে তামাক প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
নীতি উন্নয়ন
কয়েকটি দেশে সংসদ সদস্যরা তামাক কোম্পানির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিল উত্থাপন করেন।
আর্জেন্টিনার একজন জাতীয় উপ-নির্বাহী ইলেক্ট্রনিক ধূমপান যন্ত্রের (ESD) বৈধকরণ ও একটি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য বিল উত্থাপন করেন, যাতে বিদ্যমান ESD নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করা যায়। ব্রাজিলে একজন সংসদ সদস্য ই-সিগারেটের উপর নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এর উৎপাদন ও বিপণনের বৈধতার জন্য একটি বিল উত্থাপন করেন এবং বিলের খসড়া তৈরিতে কোম্পানির ভূমিকার কথা স্বীকার করেন।
স্বচ্ছতা
অনেক দেশের সরকার লবিং কার্যক্রমের নিবন্ধন চালু করেছে, তবে এদের অধিকাংশের পূর্ণ স্বচ্ছতায়ঘাটতি রয়েছে।
পানামাতে একটি সরকারী নিবন্ধন ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু সেখানে তামাক কোম্পানি সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হবে-এমন সুনির্দিষ্ট কোনো বিধান রাখা হয়নি। কলম্বিয়াতে জনপ্রতিনিধিরা লবিস্টদের জন্য একটি নিবন্ধন ব্যবস্থা রয়েছে, কিন্তু তা স্বেচ্ছামূলক রয়ে গেছে। মেক্সিকোতে কংগ্রেস অফ দ্য ইউনিয়ন লবিস্টদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছিল, কিন্তু কিছু সংসদ সদস্য নিবন্ধনবিহীন লবিস্টদের গ্রহণ করেছেন। মেক্সিকান সংসদে তামাক কোম্পানি সংশ্লিষ্ট লবিস্ট আলাদাভাবে চিহ্নিত করার কোন উপায় ছিল না।
তামাকশিল্পের সাথে সরকারের পারস্পরিক যোগাযোগ
একাধিক সরকারী কর্মকর্তা জনসমক্ষে তামাক কোম্পানিকে সমর্থন দিয়েছেন।
যেসব দেশে সরকারী মালিকানাধীন তামাক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, যেমন লেবানন ও তিউনিসিয়া, এসব দেশে উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তারা তামাক কোম্পানির প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেন, নিয়মিত কোম্পানি প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং কোম্পানির অর্জনকে সাধুবাদ জানান। ইয়েমেনে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী তামাক কোম্পানিরএকটি নতুন পণ্যের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
স্বার্থের সংঘাত
সরকার ও কোম্পানির মধ্যে যোগাযোগের দরজা খোলা থাকায় কোনও কোনও সরকার কোম্পানি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জর্ডানের শিল্পমন্ত্রী পিএমআইতে পরামর্শক ছিলেন। পাকিস্তানে দেখা গেছে, অন্তত তিনজন সাবেক সরকারী কর্মকর্তা সরকারী চাকুরি থেকে পাকিস্তান তামাক কোম্পানিতে যোগ দিয়েছে। তিউনিসিয়াতে অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তামাক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন, এবং মন্ত্রণালয়ের তিনজন কর্মকর্তা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, প্রতি বছর তামাকের কারণে ৭০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
বিচার্য বিষয়
তামাক শিল্পের প্রভাব থেকে জননীতি সুরক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রণীত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এফসিটিসি অনুচ্ছেদ ৫.৩ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন না করলে তামাক শিল্প তার ব্যবসায় সহায়ক এমন বিভাগকে লক্ষ্যবস্তু বানায়, নিজ মর্যাদা বাড়াতে সামাজিক অনুষ্ঠানে সরকারকে অংশীদার করে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে প্রভাব বিস্তার করে।
বিশ্বজুড়ে কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটের প্রচারণা করেছে এবং তামাকের ক্ষতি কমিয়ে আনতে ই-সিগারেট কার্যকর—এ বয়ান ব্যবহার করে এ সংশ্লিষ্ট বিধিবিধানের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কোনও কোনও সরকার কোম্পানির চাপের মুখে নতি স্বীকার করে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে, বিধিনিষেধ আরোপ করতে বিলম্ব করেছে বা ই-সিগারেটকে অগ্রাধিকারমূলক কর হারের সুবিধা দিয়েছে। বিশ্বে তরুণদের মাঝে ক্রমশ মহামারী আকারে ই-সিগারেট ছড়িয়ে পড়ার পরেও কোনো কোনো সরকারী কর্মকর্তা ই-সিগারেট বৈধকরণের বিল উত্থাপন করেছে।
৩২টি দেশ তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, যদিও কোম্পানিগুলো সিএসআর ব্যবহার করে জনমনে তাদের ভাবমূর্তির উন্নতি এবং বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব শক্তিশালী করে চলেছে। বিভিন্ন সরকার সিগারেটের বর্জ্য পরিষ্কার, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে কোম্পানির ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে পরিবেশবান্ধব তুলে ধরার সুযোগ দিয়েছে এবং কোম্পানির কাছ থেকে দাতব্য অনুদান সহায়তা গ্রহণ করেছে।
তামাক কোম্পানিগুলো তামাক করের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আগ্রাসী আক্রমন করে চলেছে, যা তামাক ব্যবহার কমাতে প্রমাণিত। সূচকটিতে দেখা গেছে যে, কোনও কোনও সরকার তাদের করনীতি সুরক্ষিত রেখেছে, আবার অনেকে কর বৃদ্ধি না করতে কোম্পানির চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে, অথবা কোম্পানিগুলোকে কর হ্রাস করার ক্ষেত্রে বা নির্দিষ্ট পণ্যের বেলায় অগ্রাধিকারমূলক কর হার চালুতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে।